চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ।। চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি-বোয়ালমারি গ্রামের পান বরজ থেকে ভাংবাড়িয়া গ্রামের যুবতী খালেদা আক্তার মুন্নি হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ হত্যাকান্ডে জড়িত দুই আসামী মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি ও পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মানিক মুন্সি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়,মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা’র নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম ও আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল গতকাল রাত আড়াইটার দিকে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামী চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের শেখ পাড়ার টোকন আলীর ছেলে মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি (২২) ও মইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপনকে (১৯) তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। এরপর রহস্যের জট খুলতে থাকে। এর মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে মানিক মুন্সি আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আসামী মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি (২২) আদালতকে জানিয়েছেন যে-গত ৬ নভেম্বর আসামী ও তার বন্ধুরা বড়গাংনী গ্রামে ভিকটিম মুন্নির সাথে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য নিয়ে আসে। সেখানে মুন্নি স্থানীয়দের সহযোগীতায় ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে। এরপর আসামী মানিক মুন্সি মুন্নির ওপর রাগের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর বিকালে ফোনকলের মাধ্যমে মানিক মুন্সি সাথে মুন্নির সারারাত ২০ হাজার টাকার বিনিময় অনৈতিক কাজ করার চুক্তি হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় মুন্নি বোয়ালমারি নীলমনিগঞ্জ পিটিআই মোড়ে পৌঁছালে আসামী মানিক মুন্সি তার অপর সহযোগী আসামী পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপনের মোটরসাইকেলে নিয়ে আসতে বলে।
আসামী পারভেজ মুন্সি স্বপন পিটিআই মোড় থেকে মুন্নিকে রিসিভ করে বোয়ালমারি শ্মশানের রাস্তার ফাঁকা জায়গায় মানিক মুন্সির কাছে পৌঁছে দেয়। এরপর মানিক ও স্বপন মিলে পানবরজের পিছনে জঙ্গলে মুন্নির সাথে পালাক্রমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর স্বপন ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে মানিক মুন্সি আরও একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। এসময় মুন্নিকে ৫ হাজার টাকা দিলে সে টাকা নিতে অসম্মতি প্রকাশ করে এবং চিৎকার করে। এরই এক পর্যায়ে মুন্নির গলা চেপে ধরলে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। তখন পিঠের উপর বসে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে জঙ্গলে ফেলে রেখে মুন্নির শপিং ব্যাগ ও জুতা নদীতে ফেলে দেয়।
উল্লেখ্য,গত ৯ নভেম্বর কেনাকাটার উদ্দেশ্যে রাতে আলমডাঙ্গার খালার বাসায় থাকবে বলে মা’কে জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় খালেদা আক্তার মুন্নি। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গত ১৪ নভেম্বর সকালে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের পান বরজ থেকে তার বিবস্ত্র অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহটি শনাক্তে মুন্নির পরিবারকে খবর দেয়া হয়। তার স্বজনরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু দেখে মুন্নির মরদেহ বলে শনাক্ত করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই মুন্নির মা মা বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।